শুক্রবার, ১৯ অগাস্ট ২০২২, ০৪:২১ পূর্বাহ্ন
বিনয় জোয়ারদারঃ মাদারীপুরের রাজৈরে জোড়া খুনের মামলা থেকে রেহাই পেতে এবং প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে প্রতিবেশী চাচাতো ভাই ভ্যান চালক সালাম শেখকে পরিকল্পিতভাবে রাতের আধারে খুন করে হেমায়েত শেখ, আইনাল শেখ গংরা। আর এই হত্যার পরিকল্পনাকারী হোসেনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোফাজ্জেল হোসেন চুন্নু মাতুব্বরসহ পূর্বের জোড়া খুনের মামলার আসামীরা। পুলিশি তদন্তে এমনই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ ঘটনায় পুলিশ সালাম শেখ হত্যা মামলার বাদী হেমায়েত শেখসহ ১৩ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। ঘটনাটি ঘটেছিল উপজেলার উত্তর হোসেনপুর গ্রামে।
তদন্ত প্রতিবেদন, পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায় , এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারী উপজেলার উত্তর হোসেনপুর গ্রামে জামাল খালাসী ও দেলোয়ার মেম্বার গ্রুপের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে জুলফিকার আলী খালাসী ও বাবুল মুন্সী গুরুতর আহত হয় এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এ ঘটনায় জুলফিকার আলী খালাসীর বড় ভাই শহীদ খালাসী বাদী হয়ে ৮৪ জনকে আসামী করে রাজৈর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এ মামলায় মোফাজ্জেল হোসেন চুন্নু মাতুব্বর, আইনাল শেখ, হেমায়েত শেখ আসামী হয়েছিল। হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বাড়ীতে এসে হত্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে এবং প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এই চক্রটি নতুন করে হত্যার পরিকল্পনা করে। সে মোতাবেক ২০২১ সালের ২৩ মে রাতে চাঁদের বাজার থেকে ভ্যান নিয়ে ফেরার পথে সালাম শেখকে হোসেনপুর-কাঁচাবালি সড়কের ব্রীজের কাছে নির্জন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। সালাম শেখ হত্যার ঘটনায় ২৫ মে হেমায়েত শেখ বাদী হয়ে ৪১ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এদিকে সালাম শেখের স্ত্রী, মা, ছেলে ও মেয়েরা থাকতে হেমায়েত শেখ বাদী হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছিল। এই চক্রটি সালাম শেখকে হত্যা করেই থেমে থাকেনি। এরপর তারা হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহ করতে এবং প্রতিপক্ষদের ফাঁসাতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনসহ সব ধরনের চেষ্টা চালিয়েছে।
এরপরই নড়েচড়ে বসে রাজৈর থানা পুলিশ। তদন্ত করে সালাম শেখ হত্যার আসল রহস্য উন্মোচন করে ফেলে তারা। হত্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ২ জনকে আটক করে আদালতে পাঠানো হলে তারা অপকটে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আবুল কাওছার জানান, জোড়া খুনের মামলার আসামীরা মামলা থেকে রেহাই পেতে এবং প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে সালাম শেখকে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় সালাম শেখ হত্যা মামলার ৪১ জন আসামীকে মামলা থেকে অব্যাহাত দিয়ে হত্যার পরিকল্পনাকারী এবং হত্যার সাথে জড়িত ১৩ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
রাজৈর থানার ওসি শেখ সাদিক জানান, অক্লান্ত পরিশ্রম করে সালাম শেখ হত্যার রহস্য উম্মোচন করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় ৪১ টি পরিবার হয়রানির হাত থেকে রেহাই পেয়েছে । সেই সাথে প্রকৃত দোষীদের নামে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।