মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ০৩:৪২ পূর্বাহ্ন
নিত্যানন্দ হালদার,মাদারীপুরঃ বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে বিগত দুই বছর শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হলেও মন্ডপগুলোতে তেমন আনন্দ উৎসব হয়নি।এ বছর শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে মন্ডপে মন্ডপে চলছে সাজ সাজ রব। প্রতিমা শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির কাজে। ২ সেপ্টেম্বর রবিবার মহালয়ার দেবী স্তুতির মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। জেলার ৫টি উপজেলায় ৪৫৯টি মন্ডপে চলছে পূজার ব্যাপক প্রস্তুতি।পূজা মন্ডপগুলোতে চলছে প্রতিমা শিল্পীদের রং তুলির আচর ও সাজ সজ্জা।দম ফেলার ফুসরত নেই প্রতিমা গড়ার কারিগরদের।গভীর রাত পর্যন্ত চলছে প্রতিমায় দোমাটি ও রং তুলির কাজ।গত বছরের চেয়ে এ বছর মাদারীপুরে পূজা মন্ডপের সংখ্যা বেড়েছে ৮টি।মাদারীপুরের হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগন গত দুই বছর সাদা মাটা ভাবে পূজা করলেও এ বছর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পূজা করার প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রশাসন পূজা নির্বিঘ্ন করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন।
শারদীয় শ্রী শ্রী দুর্গা পূজা উপলক্ষ্যে মাদারীপুরের মন্দির ও পূজা মন্ডপগুলোতে চলছে সাজ সাজ রব।প্রতিমা শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির কাজে।চলতি বছর জেলার সর্বাধিক পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজৈর উপজেলায়।এ বছর রাজৈর উপজেলায় ২৬০টি পূজা মন্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।এছাড়াও জেলার শিবচরে ৬০টি,কালকিনিতে ২৩টি,ডাসারে ৪১টি ও সদরে ৭৫টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।ইতো মধ্যেই মন্ডপের প্রতিমাগুলোতে মাটির কাজ শেষে চলছে রং তুলি আর সাজ সজ্জার কাজ।একেক মন্দিরে ভিন্ন ভিন্ন সাজে সাজানো হচ্ছে প্রতিমা। যার যেমন সাধ্য সেমতে চলছে সাজসজ্জা। শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সফল ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পূজারী ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের সাথে কয়েক দফা মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন প্রশাসন। মন্ডপের তালিকা করে চলছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অনুদান বরাদ্দের কাজ। অধিক ঝুকিপূর্ণ মন্ডপগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা এবং কম ঝুকিপূর্ণ মন্ডপগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি আইন শৃংখলা বাহিনী কাজ করবে বলে গোয়েন্দা বিভাগ থেকে জানা গেছে। বিভিন্ন মন্ডপে লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। পাঁচদিন ব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানালেন পূজারীরা।
মাদালীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের উত্তর বিরঙ্গল গ্রামের শচীন্দ্র নাথ বিশ^াস জানান,গত দুই বছর করোনার কারনে শারদীয় দুর্গোৎসব ব্যাপক ধূমধামে আয়োজন করতে না পারলেও এ বছর আমরা মায়ের পূজার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করেছি। আমাদের পূজায় সকল ধর্মের মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয়।
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের বাথানবাড়ী গ্রামের শান্তিরঞ্জন মন্ডল জানান,শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে পূজা মন্ডপের সাজসজ্জার কাজ চলছে। প্রতিমার রং এর কাজ শেষ হয়েছে। করোনার কারনে দুই বছর পূজায় তেমন আনন্দ উৎসব না হলেও এ বছর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে মায়ের পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
একই উপজেলার চৌরাশী গ্রামের কবি নির্মলানন্দ বিশ^াস জানান, মায়ের পূজার বাকি মাত্র অল্প কয়েক দিন। ইতোমধ্যে মন্ডপে মায়ের মূর্তির রং তুলির আচর শেষ করেছে প্রতিমা গড়ার কারিগররা। ১লা অক্টোবর থেকে মায়ের পূজা শুরু হবে।আমরা এ বছর মহা ধূমধামে মায়ের পূজা করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছি।
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পাচ্চর এলাকার প্রতিমা গড়ার কারিগর গোপাল চন্দ্র পাল জানান,গত বছর তিনি ১১ খানা দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছেন। এ বছর তৈরি করছেন ১০খানা। গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি তার সহশিল্পীরা। আগামী দুই/তিন দিনের মধ্যে রং তুলির কাজ শেষ হবে।
মাদারীপুর পুরান বাজার শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দিরের পুরোহিত পরেশ অধিকারী জানান,মহালয়ার মধ্যে দিয়ে শ্রীশ্রী দুর্গার শুভ সূচনা শুরু হয়।আগামী ১লা অক্টোবর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৫দিন ব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের ব্যাপক আয়োজন চলবে।বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে ৫দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটবে। মা এবার আসছেন গজে এবং যাবেন নৌকায়।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন মাদারীপুর জেলা শাখার সভাপতি প্রভাষক প্রানতোষ মন্ডল জানান,এ বছর মাদারীপুর জেলায় ৪৫৯খানা মন্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছরের তুলনায় এ বছর জেলায় ৮খানা পূজা বেশি হচ্ছে।শারদীয় দুর্গা পূজা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিআইজির সাথেও ভিডিও কনফেরান্সে শারদীয় দুর্গেৎসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শারদীয় দুর্গোৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,জনপ্রতিনিধি ও সুশিল সমাজের নেতৃবৃন্দের সাথেও মতবিনিময় সভা করা হয়েছে।
মাদারীপুর ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার চাউমাউ লারমা বলেন,শারদীয় দুর্গোৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রতিটি পূজা মন্ডপে আইন শৃংখলা রক্ষার্থে মন্দির কমিটির স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি আনসার থাকবে।অতিগুরুত্বপূর্ণ মন্ডপগুলোতে গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারী থাকবে এবং পুলিশ থাকবে। এছাড়াও ভ্রাম্যমান আদালতের টিমও এলাকায় কাজ করবে। প্রতিটি পূজা মন্ডপে সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য মন্দির কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শারদীয়া দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের মধ্যে দিয়ে পূজারীদের মনে বিরাজ করবে মাতৃ আরাধনার অফুরন্ত শক্তি এটাই কামনা মাদারীপুরের হিন্দু সম্প্রদায়ের।