মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ০৪:১১ পূর্বাহ্ন
নিত্যানন্দ হালদার,মাদারীপুরঃ ফাল্গুন মাসের অমাবস্যা তিথিতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও শত বছরের পুরোনো চৌহদ্দি শ্রীশ্রী সার্বজনীন অনন্ত দশ মহাবিদ্যা মন্দিরে অনন্ত দশ মহাকালী পূজা উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে তিনদিন ব্যাপী নানান অনুষ্ঠানের। এর মধ্যে রয়েছে মঙ্গল ঘট স্থাপন,অধিবাস,ধর্মীয় শোভাযাত্রা,একই সাথে দশ ব্রাহ্মণের মহাকালী পূজা,অঞ্জলি প্রদান,প্রার্থনা,বৈদিক বিশ্ব শান্তি যজ্ঞানুষ্ঠান,আলোচনা সভা,মহোৎসব,প্রসাদ বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।বসছে গ্রামীণ মেলা।ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী দশ মহাকালী পূজা দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতাদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠছে মন্দির প্রাঙ্গণ।গভীর রাত পর্যন্ত চলছে মায়ের মন্দির ও প্রতিমা দর্শন।
জানা গেছে,মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের চৌহদ্দি গ্রামের কানাই লাল বিশ্বাসের বাড়ী শত বছরের পুরোনো শ্রীশ্রী দশ কালী মন্দির প্রাঙ্গণে মায়ের আদেশ প্রাপ্ত হয়ে ১৫ বছর আগে নির্মাণ করা হয় শ্রীশ্রী সার্বজনীন অনন্ত দশ মহাবিদ্যা মন্দির। নির্মাণ করা হয় কালী,তারা,ষোড়শী,ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী,ছিন্নমস্তা,ধূমাবতী,বগলা,মাতঙ্গী ও কমলার পাথরের মূর্তি।ফাল্গুন মাসের অমাবস্যা তিথিতে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় শ্রীশ্রী দশ মহাকালী পূজার।এ উপলক্ষে রবিবার বের করা হয় পূজারীদের ধর্মীয় শোভাযাত্রার।রাতে অনুষ্ঠিত হয় একই সাথে ১০ জন ব্রাহ্মণের দশ মহাকালী পূজা।পূজা চলে ভোর রাত পর্যন্ত।পূজা অনুষ্ঠানে মাদারীপুর,গোপালগঞ্জ,বরিশাল জেলাসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য ভক্ত নর-নারী উপস্থিত হয়ে পূজা অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।অনেকেই আসছেন মায়ের মন্দিরে মানত দিতে। চলবে তিনদিন ব্যাপী ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মায়ের প্রতিমা দর্শন।এ উপলক্ষে বসছে গ্রামীণ মেলা।পূজার অতিত ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আয়োজক কমিটি।
বরিশাল থেকে আগত ব্যবসায়ী উত্তম কুমার গুহ,স্বপন কুমার মন্ডল,অরুণ দাস ও বরুণ দাসের সাথে কথা বললে তারা জানান,অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছরও তারা বরিশাল থেকে প্রায় ২শ ভক্ত নরনারী এই পূজা অনুষ্ঠানে আসছেন। প্রতি বছরই তারা এই পূজায় আসেন।আগামীতেও মায়ের পূজায় বরিশালের বিপুল পরিমান ভক্তের উপস্থিতি হবে বলে জানান তারা।
ঢাকার সাভার থেকে আগত ভক্ত জীবন কৃষ্ণ মন্ডল,সুব্রত সাহা,জগন্নাথ সাহা ও শংকর সাহা জানান,জাগ্রত মহাকালী পূজার কথা শুনে আসছি।এখানে এসে খুব ভালো লেগেছে।মায়ের ১০টি রূপ দেখে ভক্তি আরো বেড়ে গেছে।এখন থেকে প্রতি বছরই স্বপরিবারে মায়ের পূজা অনুষ্ঠানে আসব।যদি মা আমাদের সবাইকে ভালো রাখেন।
গোপালঞ্জ থেকে আগত তপন রাহা বলেন,মহাকালীর দশটি রূপ দেখে খুবই ভালো লেগেছে।এই স্থানটি একটি তীর্থ ক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে।যুগ যুগ যাতে এখানের পূজা মহা ধূমধামের সহিত অনুষ্ঠিত হয় তার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।
মাদারীপুরের চৌহদ্দি দশ কালী মন্দির কমিটির সভাপতি অমল কৃষ্ণ ভক্ত জানান,এই বাড়ীতে অনেক দিন যাবৎ পূজা হয়।দেশ-বিদেশের অনেক ভক্ত এখানে আসেন।আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই এখানকার ঐতিহ্যবাহী পূজা যাতে যুগ যুগ ধরে চলে তার জন্য সার্বিক কহযোগিতা কামনা করছি।
চৌহদ্দি শ্রীশ্রী সার্বজনীন অনন্ত দশ মহাবিদ্যা মন্দির কমিটির সভাপতি কানাই লাল বিশ্বাস জানান,এই পূজা হচ্ছে মায়ের আদেশপ্রাপ্ত পূজা।শত বছরের পুরোনো শ্রীশ্রী কালী মন্দির প্রাঙ্গণে ১৫ বছর যাবৎ মহা দশ কালী পূজা করা হচ্ছে। এক দিনের পূজা হলেও অনুষ্ঠান চলে তিনদিন পর্যন্ত।বাংলাদেশসহ দেশের বাইরের ভক্তবৃন্দও পূজা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন।বিশ্বের সকল প্রানীর মঙ্গল কামনায় এ পূজা অনুষ্ঠান করে আসছি। এ ব্যাপারে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছেন তিনি।
শ্রীশ্রী সার্বজনীন অনন্ত দশ মহাবিদ্যা মন্দিরের দশ মহাবিদ্যা কালী পূজার ঐতিহ্য ধরে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকার সর্বস্তরের জনগন।