সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১২:৪৫ পূর্বাহ্ন

নোটিশঃ-
রাজৈর নিউজ অনলাইন পত্রিকার পক্ষ থেকে আপনাদের স্বাগতম। নিত্যনতুন সকল সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।ফেসবুক পেইজ থেকে আমাদের নিউজে চোখ রাখুন:- https://www.facebook.com/rajoirnews  তাছাড়া সংবাদ এর ভিডিও দেখুন ইউটিউব থেকে  BanglaNews Tube
সর্বশেষ সংবাদঃ-
রবিবার মাদারীপুরের রাজৈরে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কুম্ভমেলা প্রকৌশলী গবেষনা ইনষ্টিটিউট নির্মান হবে শিবচরে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ,চীফ হুইপসহ বিশেষজ্ঞদের স্থান পরিদর্শন আজ ৫ জ্যৈষ্ঠ মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সেন্দিয়া গণহত্যা দিবস রাজৈরে সার্জিক্যাল (প্রাঃ) হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের শুভ উদ্বোধন রাজৈরে পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় শিশুসহ ২ জনের মৃত্যু দক্ষিণ আফ্রিকায় গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত রাজৈরের কদমবাড়িতে পুকুর থেকে এক সেবাইতের লাশ উদ্ধার জাটকা বিক্রির দায়ে শিবচরে দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা রাজৈরে পারিবারিক কলহের জেরে গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ  পদ্মা রেল সেতু ও রেল লাইন দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে বড় ঋনী করলেন-চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী
আজ ৫ জ্যৈষ্ঠ মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সেন্দিয়া গণহত্যা দিবস

আজ ৫ জ্যৈষ্ঠ মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সেন্দিয়া গণহত্যা দিবস

Madaripur Sendia Smriti Stambho

add 720x200

নিত্যানন্দ হালদার,মাদারীপুরঃ আজ ৫ জ্যৈষ্ঠ মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সেন্দিয়া গণহত্যা দিবস। একাত্তর সালের ওই দিন রাজৈরের খালিয়া ইউনিয়নের সেন্দিয়া,পলিতা,ছাতিয়ানবাড়ী ও খালিয়া গ্রামের দেড় শতাধিক মুক্তিকামী মানুষ প্রান রক্ষা করতে গিয়ে আখ ক্ষেত ও ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে পাক বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার,আলবদর,আলসামসদের হাতে প্রান হারিয়েছিলেন। অর্ধশত বছর পর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নিহতদের স্মৃতি রক্ষার্থে সরকারি অর্থায়ণে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ ও চলতি বছরের ৩ মার্চ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান এমপি উদ্বোধন করায় খুশি শহীদ পরিবারের সদস্য,স্বজন ও স্থানীয়রা।

সরেজমিন ঘুরে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,পাকসেনারা মাদারীপুরের টেকেরহাট বন্দরে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করে শুরু করে পৈশাচিকতা। ১৯৭১ সালের মে মাস। বাংলা ৫ জ্যৈষ্ঠ বিকেল ৪টা থেকে ৫টা। পাকবাহিনী ল যোগে গোপালগঞ্জ জেলার ভেন্নাবাড়ী ঘাটে নেমে চরচামটা নামক এলাকা থেকে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ ও অগ্নি সংযোগ শুরু করে। সেখান থেকে পাকবাহিনী তাদের দোসরদের সহযোগিতায় নৌপথে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর হয়ে রাজৈরের কদমবাড়ী এলাকায় গান বোট থেকে নেমে সড়ক পথে বাড়ী-ঘরে অগ্নি সংযোগ করে আসছে খবর পেয়ে খালিয়া ইউনিয়নের সেন্দিয়া,পলিতা,খালিয়া ও ছাতিয়ান বাড়ী এলাকার হাজার হাজার নিরীহ জনগন আখ ক্ষেতসহ বিভিন্ন ঝোপ জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। যারা বাড়ী ঘর ছেড়ে পালাতে পারেনি তাদেরকে ধরে নিয়ে যায় পশ্চিম সেনদিয়া ফকিরবাড়ির ভিটায়, সেনদিয়া বাওয়ালী ভিটায়,বারিকদার বাড়ীর উত্তর বাঁশ বাগানে,শচীন বারিকদারের বাড়ির দক্ষিণ খালপাড় এবং ছাতিয়ানবাড়ির পুকুর পাড়ে।কারো চোখ বেঁধে, কারো হাত-পা বেঁধে,বাবা-মায়ের সামনে সন্তানকে,আবার সন্তানের সামনে বাবা-মাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।আবার কাউকে বুটজুতা দিয়ে লাথি মেরে ক্ষত-বিক্ষত করে আগুনে পুড়ে বা গুলি করে হত্যা করে। এছাড়াও অনেককে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। দীর্ঘ সময় এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে নরপিশাচরা ফেরার উদ্দেশ্যে পশ্চিম সেনদিয়া গ্রাম দিয়ে যেতেই আখ ক্ষেতে মানুষের শব্দ পেয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। নিমিষেই প্রাণ হারায় শতাধিক মানুষ। এছাড়াও পাকবাহিনীর দোসররা আখক্ষেত এবং ঝোপ জঙ্গলে তল্লাসী চালিয়ে মাটির গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ও ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে ৬টি স্পটে দেড় শতাধিক পলায়নরত মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। নারকীয় এ তান্ডব শেষে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা চলে যাবার পর গ্রামের অন্যান্য লোকজন ও আত্মীয় স্বজন এসে ঝোপ জঙ্গল এবং আখ ক্ষেতের মধ্যে থেকে লাশ উদ্ধার করে খালের পাশে ৬টি স্থানে দেড় শতাধিক মানুষকে মাটি চাপা দিয়ে রাখে। এ সকল স্থানে মাটি খুড়লেই মাটির মধ্যে থেকে এখনও মাথার খুলি ও হাড়-গোড় বেড়িয়ে আসছে। সেদিনের ঘটনায় দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ,শিশু ও বৃদ্ধ নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয় এবং গুরুতর আহত হয় অনেকেই।পাকবাহিনীর গুলিতে আহদের অনেকেই এখনও ধুঁকে ধুঁকে মরছে।স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নিহতদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতি সৌধ।

সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শী সেন্দিয়া গ্রামের শচীন্দ্র নাথ বারিকদারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৭১ সালের ৫ জ্যৈষ্ঠ অন্যান্য দিনের মত পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের হত্যা,লুন্ঠন ও অগ্নি সংযোগের কথা মনে করে আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে সেন্দিয়ার বাড়িতে যখন অবস্থান করছিল। এমনি সময় সংবাদ আসছে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা কদমবাড়ী থেকে অগ্নি সংযোগ করতে করতে আসছে এ সংবাদ শুনে এলাকার জনগন যে যেইভাবে পারছে পালানোর চেষ্টা করছে। এ সময় তাদের বাড়ির লোকজনও বাড়ির নিকটস্থ আখক্ষেতের মধ্যে পূর্বের করা গর্তের মধ্যে পালিয়েছিল। কিন্তু পালিয়েও প্রান রক্ষা হয়নি। পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের চোখ ফাকি দেওয়া যায়নি। তারা বাড়ী-ঘর আগুনে তামা করে দেওয়ার পর চিরুনি অভিযান চালায় ঝোপ-জঙ্গল ও আখ ক্ষেতের মধ্যে। পলায়নরত নিরীহ মানুষগুলো ঘাতকদের দেখে আতঙ্কিত হয়ে উঠে এবং বাঁচার জন্য কাকুতি মিনতি করতে থাকে। এতে ঘাতকদের মনে একটুও করুনার উদয় হয়নি। বরংচ ঘাতকরা এ সময় গণহত্যায় মেতে উঠে। তাদের বুলেটের আঘাতে তার বাবা,মেঝ ভাই,কাকাতো ভাই,কাকিমাসহ পরিবারের ৮ জন সদস্য মারা যান। তাদের লাশগুলো বাড়ীর নিকটস্থ খালপাড়ে একই গর্তের মধ্যে রাখা হয়। বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে শচীন্দ্র নাথ বারিকদারের কান্নায় উপস্থিত জনতা চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। সকলেই ফুফিয়ে ফুফিয়ে কেঁদেছে। শচীন্দ্র নাথ বারিকদারের কান্না থামানোর শান্তুনা কারোও ছিলনা। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে নিহতদেত স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করায় তার পরিবারসহ এলাকার জনগন দারুনভাবে খুশি।

একই গ্রামের মাস্টার ক্ষিতিশ চন্দ্র বারিকদারের সাথে কথা বলে জানা গেছে,সে দিনের ঘটনায় পাক বাহিনী ও তাদের দোসররা ১৭টি গ্রামের ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে তামা করে দেয় এবং অসংখ্য মানুষ হত্যা করে।স্বাধীনতার অর্ধশত বছর কেটে গেলেও এখনও এ এলাকার ঝোপ-জঙ্গল ও খালের পাড় খুঁড়লেই পাক বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদর আলসামসদের হাতে নিহতের মাথার খুলি এবং হাড়-গোড় পাওয়া যাচ্ছে। দিবসটি সরকারিভাবে পালনের দাবি জানান তিনি।

সেদিনের ঘটনায় শিকারী বাড়ীর পরান শিকারী,স্ত্রী সুরধনী শিকারী,ছেলে পুলিন শিকারী ও মেয়ে মধুমালা শিকারীকে হত্যা করা হয়।মা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলে ৪ মাসের শিশু প্রভাষ শিকারী মায়ের কোল থেকে ছিটকে খালের কচুরীপানার উপর পড়ে থাকে। তার কান্নায় যখন আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া এলাকার জীবিত লোকজন যখন স্বজনদের খোঁজ খবর নিতে ঝোপ-জঙ্গল,আখক্ষেত ও খাল এবং পুকুরের আশপাশ খুঁজতে থাকে, ঠিক তখনই একটি শিশুর গগন বিদারী কান্না শুনতে পেয়ে এগিয়ে আসে। খালের কচুরিপানার উপর এক পিতা-মাতা ও স্বজনহারা রক্তাক্ত শিশু কান্না করছে। বাব-মায়ের আদরের পুত্র প্রভাষ শিকারীকে উদ্ধার করা হয়। কান্না থামানোর যতই চেষ্টা করা হয়েছে,ততই তার কান্না যেন আরো বেড়ে গেছে। এক অনিশ্চিত জীবন যাত্রা। এমনি করুণ পরিস্থিতিতে প্রভাষ শিকারীকে তুলে দেওয়া হলো বাড়ির নিকটস্থ বিরজনী বাড়ৈর হাতে। বিরজনী নিজ সন্তান পাগলের মৃত্যু জ্বালা কিছুটা লাঘব করতে চেয়েছিলেন প্রভাষ শিকারীকে ঘিরে। কিন্তু প্রভাষের বুক ফাটা কান্নায় বিরজনী তাকে ফিরিয়ে দিলেন তার বোন ফুলমালার কাছে। ফুলমালা তার আদরের ভাইকে আদর যত্নে বড় করে তুলতে তুলে দেন মুকসুদপুরের খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের হাতে। তার গগন বিদারী কান্না সহ্য করতে না পেরে সেখানেও বহু মায়ের কোল রদবদল করতে হয়েছে প্রভাষকে। খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের আদর যত্নে বড় হওয়া প্রভাষ শিকারীর নামকরণ করা হয় মোশি বাড়ৈ। পিতা-মাতা ও ভাই-বোনকে হারিয়ে খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের আশ্রয়ে বড় হয়ে মোশি বাড়ৈ বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করছেন। পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে সেনদিয়া,পলিতা,ছাতিয়ানবাড়ী ও খালিয়ার শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে মোশী বাড়ৈর প্রচেষ্টায় একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়াও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে সরকারি অর্থায়ণে আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।

মোশী বাড়ৈ ও তার সহধর্মিনী দীপা বাড়ৈর অর্থায়নে এবং গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বানিয়ারচরের শিক্ষক মাইকেল বাড়ৈর সার্বিক সহযোগিতায় ও ডঃ অরুন কুমার গোস্বামীর সম্পাদনায় ২০০৯ সালের ১৪ এপ্রিল শহীদ স্মৃতি সেনদিয়া নামে একটি স্মরণিকা বের করা হয়। একাত্তরের ৫ জ্যৈষ্ঠ পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছিলেন স্মরণিকায় তাদের ১২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

সেদিন এ নির্মম পরিনতির শিকার হয়েছিলেন যারা তারা হলেন সেনদিয়া গ্রামের পরান শিকারী,পুলিন শিকারী,সুরধনী শিকারী,মধুমালা শিকারী,বড়বুড়ী শিকারী, বিনোদিনী শিকারী,প্রমথ শিকারী,সুবাসী শিকারী,কুমদী বেপারী,এলোকেশী কুন্ডু,সুমিত্রা বৈরাগী,শোভা রানী বৈরাগী,মালতী বৈরাগী,তরঙ্গী বৈরাগী, সুলতা বৈরাগী,ফেলু সরদার, প্রশান্ত সরদার,প্রসেন সরদার,বিরেন বাড়ৈ,সৌদামনি বাড়ৈ,মনিমালা বাড়ৈ,দিপালী বাড়ৈ,ঘ্রান্তি রানী মন্ডল,বেনী মাধব মন্ডল,যশোদা মন্ডল,জ্ঞানদা মন্ডল,ব্রজবাসী মন্ডল,মরী রানী মন্ডল,পাষানী বিশ্বাস,জুড়ান বিশ্বাস,করুনা মন্ডল,গৌরী মন্ডল,মনিন্দ্র মন্ডল, বিমল বাওয়ালী,ঘাঘরী বাওয়ালী,রাইসোনা মোহন্ত,ঘাঘরী মজুমদার,পার্শ্বনাথ বারিকদার,গৌরী বারিকদার, কুসুম রানী বারিকদার,মধুমালা বারিকদার,আলোমতি বারিকদার,ধন্য চন্দ্র বারিকদার,যতীন বারিকদার,আন্না রানী বারিকদার,আয়না রানী বারিকদার, ময়না রানী বারিকদার,সাধন বারিকদার,ভগবতী বারিকদার, শ্রীমতি বারিকদার, পূজা রানী বারিকদার,পুষ্প রানী বারিকদার,রতিকান্ত বারিকদার,জিতেন বারিকদার,লক্ষ্মী রানী বারিকদার,মালতী বারিকদার,সুশীলা বারিকদার,শান্তি রানী বারিকদার,সুলতা রানী বারিকদার,জ্ঞানদা বারিকদার,লেবু বারিকদার, শান্তিলতা বারিকদার,মালতী বারিকদার,পলিতা গ্রামের সুমলা বারিকদার,মনীন্দ্র নাথ বারিকদার,দুঃখীরাম বারিকদার,মালতী বারিকদার,দোলা বারিকদার, মাধবী বারিকদার,মধুমালা বারিকদার,মরী মন্ডল, ছাতিয়ান বাড়ীর নেমু মল্লিক,মালতী মল্লিক, সুমী মল্লিক,পাঁচি মল্লিক,বিরাট মল্লিক,সাধু মল্লিক,কুটী মল্লিক,অনি মল্লিক,কুরি মল্লিক,সরস্বতী মল্লিক,মধুমালা মল্লিক,ভুবন মল্লিক,ক্ষ্যান্ত মল্লিক,সূর্যকান্ত মল্লিক,কুিটবুড়ি মল্লিক,সুধা কির্ত্তনীয়া,রাজু বাড়ৈ,পুলিন বাড়ৈ,অলন্ত বাড়ৈ,কুটি রানী বাড়ী,দশরথ বাড়ৈ,রাম চন্দ্র বাড়ৈ,পাগলী বাড়ৈ,মাখন বাড়ৈ,রসিক বাড়ৈ,সৌদা বাড়ৈ,মনিমালা বাড়ৈ,মঙ্গল বাড়ৈ, সুমতী বৈদ্য,জৈলাশী গোলদার,সুরেন বৈরাগী,চিত্র বৈরাগী,কমলা মন্ডল,জগদীশ বারুরী,গোপাল বারুরী,ঐমুনা বারুরী,মৃত্যুঞ্জয় রায়,রাজ্যেশ্বর রায়,মইফুল রায়,জগবন্ধু বালা,পাচু বালা,রঞ্জন বালা,ফুলমালা বালা,ঘ্রাšিত বেপারী,পরিমল বেপারী,আনন্দ বেপারী,নারায়ন বেপারী,উল্লাবাড়ী গ্রামের বিজয় বাড়ৈ,খালিয়া গ্রামের চন্ডীচরণ বালা,কেনারাম মন্ডল,পূণ্যচরণ পালসহ দেড় শতাধিক মানুষ । এ ছাড়াও স্মরণিকায় ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মহানন্দ সরকারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে ।

স্মরনিকায় উল্লেখিত বিভিন্ন লেখকদের লেখা পড়ে গায়ের লোম এখনও শিহরিয়া উঠে।লেখকবৃন্দ তাদের লেখার মধ্যে সেদিনের লোম হর্ষক ঘটনা তুলে ধরেছেন।

স্মরনিকায় কষ্টময় সেই দিনগুলির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ডঃ অরুণ কুমার গোস্বামী,অধীর রঞ্জন হোড়, নির্মল কান্তি হালদার, ধীরেন্দ্র নাথ বারুরী, অনুকুল চন্দ্র বাড়ৈ, রাজ্যেশ্বর মন্ডল, ডাঃ তারাপদ মন্ডল, বলরাম রায়, ফাদার মারিনো রিগন, রমেশ চন্দ্র মন্ডল, রনজিৎ কুমার বিশ্বাস, মাইকেল বাড়ৈ,লক্ষী রানী রায়,মনিমোহন মন্ডল,সোনমনি বাড়ৈ,প্রবীন কুমার মন্ডল,নরেশ চন্দ্র মন্ডল,ভজন বারিকদার,দুর্গাচরণ রায়, কমল চন্দ্র বাড়ৈ,জগদীশ চন্দ্র বৈরাগী ও আল্লাদী বারিকদার আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন।

এর মধ্যে লক্ষী রানী রায় স্মরণিকায় লিখেছেন,পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা তার বাবা ও অন্তঃসত্ত্বা মাসহ পরিবারের ৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে। তাকে হত্যা না করলেও অমানুষিক নির্যাতনের পর গোপন অঙ্গের পার্শ্ব দিয়ে গুলি করলে অপর দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। দীর্ঘ দিনেও তিনি সেই দুর্বীসহ যন্ত্রনার কথা কাউকে না বলে মনের ব্যথা মনের মধ্যেই লুকিয়ে রেখেছেন। দীর্ঘ ৪৬ বছরেও কেউ তাদের খোঁজ খবর রাখেনি বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

দুর্গাচরণ রায় তার লেখায় উল্লেখ করেছেন, তার পরিবারের ৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ সময় তার গর্ভবতী বৌদির পেটে গুলি করলে তার নির্মম মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও ১০-১২ বছরের কন্যার গোপন অঙ্গের পাশে গুলি করলে সে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে বর্তমানে অসাভাবিক জীবন যাপন করছে।

প্রবীণ চন্দ্র মন্ডল তার স্মৃতিচারণে উল্লেখ করেছেন,ফকির মাঝি তার দুধের শিশুকে নিয়ে আখ ক্ষেতের মধ্যে পালিয়েছিল। শুধু ফকির মাঝি একাই সে দিন আখক্ষেতের মধ্যে আশ্রয় নেয়নি। আশ্রয় নিয়েছিল শতশত মানুষ। গুলির শব্দ শুনে ফকির মাঝির শিশু পুত্র কান্না শুরু করেছিল। কান্না থামানের জন্য অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে অবশেষে নিজ পুত্রকে গলা টিপে হত্যা করে। মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতি চারণ শুনে হাজারও লোক চোখের জলে বুক ভাসিয়ে কেঁদেছে। এমনি অসংখ্য ঘটনার কথা উল্লেখ রয়েছে শহীদ স্মৃতি সেনদিয়া নামের স্মরণিকায়।

মাদারীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডের সাবেক ইউনিট কমান্ডার মোঃ শাহজাহান হাওলাদার জানান,পাক বাহিনীর ও তাদের দোসরদের হাতে খালিয়ার সেনদিয়া,পলিতা,ছাতিয়ানবাড়ী ও খালিয়া গ্রামের দেড় শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর লাশগুলো ৬টি স্থানে গণকবর দিয়ে রাখা হয়। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের পক্ষ থেকে গণকবরগুলো চিহ্নিত করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সাবেক নৌমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্মৃতিসৌধ নির্মিত হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা ও এলাকাবাসী খুশি। দিবসটি সরকারিভাবে পালনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাবেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

Comments

comments

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

add 720x200

Leave a Reply




add 300x600

উন্নয়ন সহযোগীতায়ঃ- সেভেন ইনফো টেক