শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন
নিত্যানন্দ হালদার,মাদারীপুরঃ নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে মাদারীপুরের রাজৈরের সেন্দিয়ার ৭১এর গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে বিশেষ প্রার্থনা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল গণহত্যায় শহীদদের সমাধীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ,জাতীয় পতাকা উত্তোলন,বিশেষ প্রার্থনা,আলোচনা সভা,হরিনাম সংকীর্তন ও নরনারায়ণ সেবা। মঙ্গলবার সেন্দিয়া গ্রামের রনজিত কুমার বিশ^াসের বাসভবনে তার মাতৃদেবী মনখুশি বিশ্বাসের ২০তম মৃত্যু বার্ষিকী ও পিতা শহীদ জুরান চন্দ্র বিশ্বাসের স্মরণে ধীরেন্দ্র নাথ মন্ডলের সভাপতিত্বে ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল কুমার রায়ের অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নূর মোহাম্মদ মিয়া। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সরকারি রাজৈর কলেজের শিক্ষক নিত্যানন্দ হালদার। স্মরণ সভায় অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ,রনজিত কুমার বিশ্বাস,গণপতি সরদার,রাজ্যেশ্বর মন্ডল,তারাপদ মন্ডল,সঙ্গীত শিল্পী অধীর চন্দ্র বাইন,চাঁদমোহন বাড়ৈ,প্রভাষ বারিকদার,আনন্দ চন্দ্র বাড়ৈ,কালিদাস বিশ্বাস,মৃদুলা বিশ্বাস,শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির ফরিদপুরের মাতুব্বর,আতিকুর রহমান,ইদ্রিস আলী শেখ,নিত্যানন্দ বিশ্বাস,সুবোধ সাহা,কলম আলী শেখ,ছিহারন বিবি,আবুল কাশেম প্রমুখ।
১৯৭১ সালের মে মাসে পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার,আলবদর ও আল শামসরা খালিয়া ইউনিয়নের সেন্দিয়া,পলিতা,খালিয়া ও ছাতিয়ান বাড়ী এলাকার আখক্ষেত এবং ঝোপ জঙ্গলে তল্লাসী চালিয়ে মাটির গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ও ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে আশ্রয় নেওয়া মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে দেড় শতাধিক পলায়নরত মানুষকে হত্যা করে। নারকীয় এ তান্ডব শেষে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা চলে যাবার পর গ্রামের অন্যান্য লোকজন ও আত্মীয় স্বজন এসে ঝোপ জঙ্গল এবং আখ ক্ষেতের মধ্যে থেকে লাশ উদ্ধার করে খালের পাশে ৬টি স্থানে দেড় শতাধিক মানুষকে মাটি চাপা দিয়ে রাখে।
সেদিন এ নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন সেনদিয়া গ্রামের রনজিত কুমার বিশ^াসের পিতা জুরান বিশ্বাস,পরান শিকারী,পুলিন শিকারী,সুরধনী শিকারী,মধুমালা শিকারী,বড়বুড়ী শিকারী,বিনোদিনী শিকারী,প্রমথ শিকারী,সুবাসী শিকারী, পার্শ্বনাথ বারিকদার,গৌরী বারিকদার,কুসুম রানী বারিকদার,মধুমালা বারিকদার,আলোমতি বারিকদার,ধন্য চন্দ্র বারিকদার,যতীন বারিকদার,আন্না রানী বারিকদার,আয়না রানী বারিকদার, ময়না রানী বারিকদার,সাধন বারিকদার,ভগবতী বারিকদার, শ্রীমতি বারিকদার, পূজা রানী বারিকদার,পুষ্প রানী বারিকদার,রতিকান্ত বারিকদার,জিতেন বারিকদার,লক্ষ্মী রানী বারিকদার,মালতী বারিকদার,সুশীলা বারিকদার,শান্তি রানী বারিকদার,সুলতা রানী বারিকদার,জ্ঞানদা বারিকদার,লেবু বারিকদার, শান্তিলতা বারিকদার,মালতী বারিকদারসহ সেন্দিয়া,পলিতা,খালিয়া ও ছাতিয়ানবাড়ী এলাকার ১২৬জন।
শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সদস্যরা তাদের বক্তব্যে বলেন, গণহত্যা দিবসকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান এবং প্রতিটি শহীদদের নাম গেজেটভূক্ত করার আবেদন করেন,যে এলাকায় যেদিন গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে সেদিন সে এলাকার স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে গণহত্যা দিবস পালন এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের যেকোন একজনকে সরকারি চাকুরীর ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ,বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ,সাংবাদিক,জনপ্রতিনিধি ও সুশিল সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।