মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন
নিত্যানন্দ হালদারঃ মাদারীপুরে সরকারি কলেজের এক শিক্ষককে যাত্রীবাহী বাসে ডাবের পানিতে সুকৌশলে চেতনানাশক খাওয়ায়ে অচেতন করে স্বর্ণালঙ্কার লুটের ঘটনায় অজ্ঞান পাটির ৩ সদস্যকে গ্রেফতারের পর দুইদিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করার পর বিজ্ঞ আদালত আসামীদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে । পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা অপরাধের কথা স্বীকার করলেও আদালতে অস্বীকার করায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রের উপস্থিতিতে রবিবার বিকালে ভিকটিমের মাধ্যমে আসামীদের সনাক্তকরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে মাদারীপুর সদর মডল থানা পুলিশ ।
পুলিশ,সিসি টিভির ফুটেজ,পূজারী ও মামলার বিবরনে জানা গেছে, মাদারীপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বেদানন্দ হালদার গত ১৮ আগস্ট শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে মাদারীপুর শহরের শহীদ মানিক সড়কের ভাড়া বাসা থেকে বের হয়ে বাজিতপুর শ্রীশ্রী প্রণব মঠের দুপুরের পূজা আরতিতে অংশ গ্রহনের উদ্যেশে টেকেরহাটগামী একটি লোকাল বাসে রওয়ানা দেন । বাসটি মাদারীপুরের মস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌছলে বেদানন্দ হালদার তার পাশের সিটের এক যাত্রী(অজ্ঞান পাটির সদস্য) ডাব কিনে খান । এ সময় ডাব বিক্রেতার অনুরোধে কলেজ শিক্ষকও একটি ডাব কিনেন । অজ্ঞান পাটির সদস্যরা শিক্ষকের কেনা ডাবটিতে সুকৌশলে কাটার সময় পানিতে চেতনানাশক মিশিয়ে দেয় । তিনি চেতনানাশক মিশানো ডাবের পানি পান করে নেশায় আশক্ত হয়ে সাধুব্রীজ নামক স্থানে বাস থেকে নেমে মঠের পূজা আরতিতে অংশ গ্রহণের জন্য ফলের দোকান থেকে ফল কিনেন । এ সময় অজ্ঞান পাটির সদস্যরাও বাস থেকে নেমে তাকে অনুসরণ করতে থাকে । বেদানন্দ হালদার নেশায় আশক্ত অবস্থায় শ্রীশ্রী প্রণব মঠের দুপুরের পূজা আরতিতে অংশ নিতে মন্দিরে প্রবেশ করে অচেতন অবস্থায় উপুড় বসে থাকেন । পূজা আরতি চলাকালীন অবস্থায় অজ্ঞান পাটির সদস্যরা মন্দিরে প্রবেশ করে পূজারীদের চোখ ফাকি দিয়ে বেদানন্দ হালদারের হাতে থাকা আট আনা ওজনের একটি স্বর্ণের আংটি সুকৌশলে খুলে নিয়ে ফ্লিমি স্টাইলে চলে যায়।
পূজারতি শেষ হলেও অধ্যাপক বেদানন্দ হালদারকে উপুড় হয়ে বসে থাকতে দেখে পূজারীরা তাকে ওঠার জন্য অনুরোধ জানান । ডাকাডাকিতে তিনি না ওঠায় তাকে ধরে ওঠানোর চেষ্টা করলে তিনি মন্দিরের মধ্যে লুটে পড়ে যান । বিষয়টি তার বাড়ীর লোকজনকে অবহিত করলে বাড়ীর লোকজন দ্রুত এসে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে টেকেরহাট ডাঃ জুয়েল বাড়ৈ এর চেম্বারে নেওয়া হয় । চিকিৎসক তাকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামশ দেন । তাকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকার ন্যাশনাল নিউরো সায়েন্স এ্যান্ড হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তার পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন । সেখানে আসন সংকুলান না হওয়ায় ঢাকার বেসরকারি পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভতি করা হয় বেদানন্দ হালদারকে । সেখানে তিনি ৪ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মৃত্যুর কোল থেকে ফিরে আসেন ।
এ ব্যাপারে ভিকটিমের ভাইপো বিশ্বজিৎ হালদার বাদী হয়ে অজ্ঞান পাটির ৪ সদস্যকে আসামী করে মাদারীপুর সদর থানায় ২২-০৮-২৩ ইং তারিখ একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন । জিআর মামলা নং৫১৭/২৩(M)।
পুলিশ চট্রগ্রামের পাহাড়তলী থানা পুলিশের হাতে অজ্ঞান পাটির গ্রেফতারকৃত ৩ সদস্য ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর থানার নৈকাঠি গ্রামের অধীর অধিকারীর ছেলে বিপ্লব অধিকারী(৩৬),বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানার পাথরঘাটা গ্রামের মোঃ ফজলু ঘরামীর ছেলে মোঃ সোহাগ ঘরামী (৪১) ও একই থানার গুটাবাছা গ্রামের মৃত নিজাম ফকিরের ছেলে মোঃ শাহাদাত হোসেন(৫৪) কে শোন এরেস্ট দেখানো হয় ।আসামীদের মাদারীপুর জেলা কারাগারে প্রেরণের পর পুলিশ ৫ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত ২দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাদারীপুর সদর মডেল থানার সাব ইন্সপেক্টর মোঃ বাবুল হাওলাদার জানান,অজ্ঞান পাটির ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২দিনের রিমান্ডের পর জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয় । সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিকালে বিজ্ঞ আদালতের একজন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত ২জন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর উপস্থিতিতে জেলা কারাগারে ভিকটিম অধ্যাপক বেদানন্দ হালদার আসামীদের শনাক্ত করেন। আসামীরা বর্তমানে মাদারীপুর জেলা কারাগারে রয়েছে।