আকাশ আহম্মেদ সোহেল: মাদারীপুরে মানবপাচার মামলা তুলে নিতে হুমকির পর বাদির মুদি দোকানে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। মামলার আসামি লিবিয়ার মানবপাচারকারী রাজীব মাতুব্বর(৩০) ও তার শ্বশুর হায়দার মোল্লা (৬০) এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ। ভুক্তভোগী মজিবর শেখ(৪০) জেলার রাজৈর উপজেলার পূর্ব স্বরমঙ্গল গ্রামের মৃত ধলু শেখের ছেলে। এ ঘটনায় নগদসহ সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে রোববার (৮ জুন) বিকেল ৩ টার দিকে রাজৈর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মজিবর।স্থানীয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মুজিবরের ছেলে রিপন শেখকে স্পন্সর ভিসায় ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় পাঠায় মানবপাচারকারী দালাল রাজিব ও তার লোকজন। রাজিব পাশ্ববর্তী গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গয়লাকান্দি গ্রামের আইয়ুব আলী মাতুব্বরের ছেলে। পরে রিপনকে লিবিয়ায় আটকে রেখে কয়েক ধাপে ৪৩ লক্ষ টাকা টাকা হাতিয়ে নেয় রাজিব, তার দুই ভাই রেজন মাতুব্বর(৩৫) ও মহি মাতুব্বর (৩২), বাবা আইয়ুব আলী মাতুব্বর(৫০), শ্বশুর হায়দার মোল্লা(৬০) ও শ্যালক জামিল মোল্লা(৩০)। একপর্যায়ে রিপনের কোন খোঁজ না পেয়ে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২৩ মার্চ মাদারীপুর বিজ্ঞ মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়ের করেন মজিবর। মামলা নং- ৬২/২৫। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জ আদালতে মিথ্যা মানবপাচার মামলা দায়ের করে মজিবরকে জেলহাজতে পাঠান মানবপাচারকারীরা। এরপর মজিবর জামিনে আসলে তাকে আরো মিথ্যা মামলায় ফাসানো সহ হত্যা, ঘরে আগুনে পোড়ানো ও দোকান ভাংচুর-লুটপাটের হুমকি দিয়ে তার মামলাটা তুলে নিতে বলে আসামি পক্ষের লোকজন। এতেও তাকে দুর্বল করতে না পেরে ঈদুল আজহার প্রথম রাতেই মজিবরের মুদি দোকানে লোকজন পাঠায় আসামিরা বলে অভিযোগ। পরে আতংক ছড়াতে রোববার (৮ জুন) ভোররাতে দোকানের উপরের টিন কেটে ভিতরে প্রবেশ করে এবং ব্যপক ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে শাটার খুলে পালিয়ে যায়। এসময় নগদ এক লাখ ৪৬ হাজার টাকা সহ মালামাল লুটপাট ও ভাংচুরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফজরের নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় দোকানের মধ্যে থেকে আওয়াজ শুনতে পান মুসল্লীরা। এসময় পাহারাদারকে ডাক দিলে টের পেয়ে লুটপাটকারী চোরেরা পালিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী মজিবর শেখ জানান, আমার ছেলেকে স্পন্সর ভিসায় ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়া নিয়ে আটকে রাখে রাজিব দালাল। পরে কয়েক ধাপে আমার কাছ থেকে ৪৩ লাখ টাকা নিয়ে আমার ছেলেকে গুম করে রাখে। একপর্যায়ে আমি মাদারীপুর আদালতে মানবপাচার মামলা করি। কিন্তু এখনো কোন আসামি গ্রেপ্তার হয় নাই। এই মামলা তুলে নিতে আমাকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিতেছে দালাল রাজিব পক্ষের লোকজন।
তিনি আরও জানান, দুইদিন আগেও আমাকে লোকজন দিয়ে হুমকি দেওয়াইছে দালাল রাজিব। তারা হুমকি দিয়ে বলছে মামলা না উঠালে টেকেরহাট থাকতে দেবে না। আমি একটা মামলা দিলে তারা আমাকে ১০ টা মামলা দেবে। এছাড়া আমার বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবে, নাহলে আমাকে হত্যা করে গুম করে ফেলবে, নাহলে আমার দোকান লুটপাট ও ভাংচুর করবে। ওরা আমার দোকানে লোকজন পাঠাইয়া সেইটাই করে দেখালো। এর আগেও আমার ছেলেকে পাঠানোর পর থেকেই আমার দোকানে এ ধরনের ঘটনা ঘটা শুরু হয়। থানায় কয়েকটি অভিযোগও দিয়েছিলাম। আমি প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার বিচার চাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রাজিব মাতুব্বর সহ কারো সাথেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
রাজৈর থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) ফজর আলী জানান, এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মজিবর শেখ। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেবেন অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা।