মোনাসিফ ফরাজী সজিবঃ জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪ এ মাদারীপুর জেলায় কলেজ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন মাদারীপুরের সরকারি রাজৈর কলেজের সংস্কৃত বিভাগের প্রভাষক নিত্যানন্দ হালদার। তিনি ১৯৯৬ সালের ৭ আগস্ট মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী রাজৈর ডিগ্রি কলেজে সংস্কৃত বিভাগের প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। তিনি বিনয়ী,সদাহাস্যোজ্জল,সদালাপী ও একজন সাদামনের মানবিক মানুষ। তিনি সরকারি রাজৈর কলেজের শিক্ষার্থীদের একজন প্রিয় শিক্ষক হিসাবে সুনাম সুখ্যাতি কুড়িয়েছেন। আমাদের প্রিয় নিত্যানন্দ হালদার স্যার জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৪ এ জেলায় কলেজ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হওয়ায় রাজৈর কলেজের প্রাক্তণ শিক্ষার্থী ও সেতু টিভির পক্ষ থেকে স্যারকে জানাচ্ছি প্রানঢালা অভিনন্দন ও ফুলেল শুভেচ্ছা।
নিত্যানন্দ হালদার স্যারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হলো। নিত্যানন্দ হালদার মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন।তার পিতার নাম সুরেন্দ্রনাথ হালদার,মায়ের নাম তুলি হালদার।চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তারা তিনি ভাই নিত্যানন্দ হালদার, এ্যাড.চৈতন্য চন্দ্র হালদার ও বেদানন্দ হালদার দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি দুই সন্তানের জনক। স্ত্রী দীপা রানী মন্ডল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। বড় মেয়ে পূজা হালদার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভারসিটিতে ফার্মেসি বিভাগে(সম্মান) চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী এবং ছোট মেয়ে নবনিতা হালদার খুকু ঢাকা ইস্পাহানী গার্লস কলেজে একাদশ বিজ্ঞান বিভাগে পড়া লেখা করছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ
তিনি মামাবাড়ী বাজিতপুর ইউনিয়নের চৌরাশী গ্রামে পাঠশালায় তালপাতায় আক্ষরিক জ্ঞান অর্জন করেন। এরপর তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন তার নিজ গ্রামের ৬৫নং নয়াকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর রাজকুমার এডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৮১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৮৪ সালে মাদারীপুর সরকারী নাজিমউদ্দিন কলেজ(বর্তমান মাদারীপুর সরকারি কলেজ) থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে দ্বিতীয় বিভাগ অর্জণ করেন। ১৯৮৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন সরকারী নাজিমউদ্দিন কলেজ(বর্তমান মাদারীপুর সরকারি কলেজ) থেকে স্নতক শ্রেণিতে দ্বিতীয় বিভাগ নিয়ে পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবনঃ
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে ১৯৯১ সালে মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের কেডিবিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৯৫ সালে রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর ছইফউদ্দিন মহাবিদ্যালয়ে সংস্কৃত বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। সেখান থেকে তিনি ১৯৯৬ সালের ৭ আগস্ট মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী রাজৈর ডিগ্রি কলেজে সংস্কৃত বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন।
সাংবাদিকতাঃ
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া লেখার পাশাপাশি ১৯৯১ সাল থেকে সংবাদপত্র জগতে প্রবেশ করেন।তিনি দৈনিক কালবেলা,দৈনিক আজকের কাগজ,দৈনিক লাল সবুজ,দৈনিক সকালের খবর,দৈনিক মাতৃভূমি,দৈনিক সংবাদ,দি ডেইলি স্টার,দৈনিক শিক্ষা,এফএম রেডিও টুডে,রেডিও ধ্বণি,দৈনিক খোলা কাগজ,দৈনিক শিক্ষা,শিক্ষাতথ্য ও বাংলাদেশ সময় পত্রিকায় মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেছেন।বর্তমানে তিনি বৈশাখী টেলিভিশন ও দৈনিক ভোরের আকাশ পত্রিকায় মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করছেন।সাংবাদিকতায় তিনি একাধিকবার প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছেন। তিনি সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখায় তাকে বিভিন্ন সংগঠন থেকে এ্যায়ার্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি মাদারীপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের উপর অনুসন্ধ্যানী প্রতিবেদন লিখে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি তার ছোট বেলা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার দেখা ও কষ্টের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে আমার ছোটবেলা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছেন। যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
জনসেবাঃ
নিত্যানন্দ হালদার অধ্যাপনা ও সাংবাদিকতা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি মাদারীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দুই বারের নির্বাচিত এলাকা পরিচালক হিসাবেও মাদারীপুরে তার যথেষ্ট সুনাম সুখ্যাতি রয়েছে। তিনি শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজৈর উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন। রাজৈর উপজেলার পাশাপাশি মাদারীপুর সদর উপজেলাকেও শতভাগ বিদ্যুতায়িত করার জন্য কাজ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ রাজৈর উপজেলা শাখার সিনিয়র সভাপতি,বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের মাদারীপুর জেলা শাখার আহবায়ক ও ভক্ত সংঘ মাদারীপুর জেলা শাখার সভাপতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন।তিনি সরকারি রাজৈর কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘ ১২ বছর। তিনি ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে এলাকার মানুষের মধ্যে স্থান করে নিয়েছেন।
লেখালেখিঃ
তিনি ১৯৯৮ সালে ভয়াবহ বন্যার সময় মানুষের দুঃখ কষ্টের উপর অসংখ্য কবিতা ও গান লিখেছেন। তিনি সাংবাদিকতায় অনুসন্ধ্যানী ও সরেজমিন রিপোর্ট করে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি একখানা সহজ সরল সামাজিক নাটক মায়ের কৃপা রচনা করেছেন। যা মঞ্চায়ন করায় মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছিল। এছাড়াও নিত্যানন্দ হালদার স্যার বহুগুণে গুনান্বিত একজন আলোকিত মানুষ। স্যারের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করছি পরম করুনাময় সৃষ্টিকর্তার নিকট।
Comments