রাজৈর পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, এই পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৬ হাজার ৬১৮টি টিসিবি সুবিধাভোগী পরিবার রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এদের কার্ডগুলো নবায়ন করে স্মার্ট কার্ডে পরিবর্তন করার জন্য জমা নেওয়া হয়। গত ১৩ জানুয়ারি ছিল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়। এরমধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৯টি ওয়ার্ডে মোট ১১০২ টি স্মার্ট কার্ড বিতরণ করে রাজৈর পৌরসভা। রমজান মাসের আগে ও দ্বিতীয় রোজায় দুইবার তাদের মাঝে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়। কিন্তু বাকি থাকা ৫ হাজার ৫১৬টি অসহায় পরিবার বঞ্চিত হয়। দীর্ঘ দেড় মাস পার হয়ে গেলেও যাচাই-বাছাই শেষ না হওয়ায় স্মার্ট কার্ড হাতে পাননি সুবিধাভোগী পরিবারগুলো।জানা যায়, রমজান মাস উপলক্ষে প্রতি প্যাকেজের দাম ৬৬০ টাকা নির্ধারণ করেছে হয়েছে। এই প্যাকেজে চিনি ১ কেজি ৭০ টাকা, ডাল ২ কেজি ১২০ টাকা, সয়াবিন তেল ২ লিটার ২০০ টাকা, ছোলা ২ কেজি ১২০ টাকা ও চাল ৫ কেজি ১৫০ টাকা দরে দেওয়া হয়।
রমজান মাসের শুরুতেই পাবেন স্বল্পমূল্যের টিসিবি পণ্য। এমন আসা নিয়ে রাজৈর পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রিতা বেগম, রিজিয়া বেগম, অহিদুল বেপারী, জাহিদ, ফিরোজা বেগম, খাদিজা, ফাতেমা, আব্দুস সোবহানসহ অনেকেই ছুটে এসেছিলেন টিসিবি পণ্যের গাড়ির কাছে। কিন্তু পুরনো টিসিবি কার্ড নিয়ে লাইনে দাড়ালেও স্মার্ট কার্ড না থাকায় তাদেরকে দেওয়া হয়নি স্বল্পমূল্যের পণ্য। পরে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বাড়ি ফিরে যান তারা।
এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগীরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুরনো টিসিবির কার্ড নিয়ে স্বল্পমূল্যের পণ্য কিনতে আসছিলাম। শুনছিলাম পুরনো কার্ডেই দেবে। কিন্তু আইসা দেখি স্মার্ট কার্ড ছাড়া কারো কাছে টিসিবির মালামাল বেচে না। আমরা কাগজপত্র জমা দিছি। পৌরসভা থেকে এখনো আমাগো স্মার্ট কার্ড না দেওয়ায় দুই মাস যাবত টিসিবির মালামাল কিনতে পারি না। রমজান মাসেও কিনতে পারলাম না। বাজার থেকে চড়া দামে চিনি, তেল, ডাল, ছোলা, চাল কেনা আমাদের মতো গরীব মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য। অনেকক্ষন দাড়াইছিলাম তারপরও দিল না। নতুন কার্ড পরে আসুক কিন্তু রমজান মাসে যদি আগের কার্ডে আমাগো মালামাল দিতো তাহলে ভাল হইতো। আমরা গরীব মানুষ এখনো স্মার্ট কার্ড পাই না কিন্তু কার্ড পায় বড়লোকরা।টিসিবি ডিলার মেসার্স শামীমা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শামীমা নাসরিন বলেন, এই ওয়ার্ডে মোট কার্ড ছিল ৫৩৪ টি। সেখানে স্মার্ট কার্ড পেয়েছেন ১২৬ জন। বাকিগুলো এখনো ডিজিটাল হয়নি। আমাকে ১২৬টি প্যাকেজ বরাদ্দ দিয়েছে তাই শুধু তাদেরকেই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু ১২৬ টি দিয়ে তো আর ৫৩৪ টি কার্ডের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব না। এ সমস্যাগুলো পৌরসভা থেকে বলতে পারবে।
এ ব্যাপারে রাজৈর পৌরসভা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হক বলেন, আমরা এখান থেকে কাজ শেষ করে ঢাকায় পাঠিয়েছি। এখন ঢাকা থেকে কার্ডগুলো আসার পর আমরা এ্যাপ্রুভাল দিলেই হয়ে যাবে। এতে আরো ১৫/২০ দিন সময় লাগতে পারে। সারাদেশের কার্ড নিয়ে কাজ করছে। তাই উপজেলা পর্যায়ে আসতে দেরি হচ্ছে। এই কার্ডগুলো ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নিয়ন্ত্রণ করে।
রমজান মাসের শুরুতেই বেশির সুবিধাভোগীরা টিসিবি পণ্য পেলেন না তবে সামনে পুরনো কার্ডে দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্মার্ট কার্ড ছাড়া দেওয়া কোন সুযোগ নাই। তবে বিষয়টি ডিসি স্যারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়েছি। পরবর্তীতে যদি কার্ড না হয় সেই ক্ষেত্রে হয়তো ন্যাশনাল আইডি কার্ডের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য বিক্রি করা হতে পারে। এ বিষয়ে জেলা টিসিবি অফিস থেকে ভাল বলতে পারবে।ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) মাদারীপুরের উপপরিচালক মো. কামাল হোসেন বলেন, যতগুলো স্মার্ট কার্ড হয়েছে ততোগুলো বরাদ্দ আমরা পেয়েছি। এর বেশি পাইনি। আমাদের এই কার্যক্রম ২০২২ সাল থেকে শুরু হয়েছে। এরমধ্যে যাচাই-বাছাই করে কার্ড দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আবার বাকিগুলো উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নতুন করে আপলোড দিতে বলা হয়েছিল। ইতোমধ্যে সারাদেশে ৫৭ লক্ষ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। আরো ৬ লক্ষ কার্ড প্রিন্টেড পর্যায়ে আছে। বাকি থাকে ৩৭ লক্ষ। প্রতিদিন আমাদের এনটিআরসি সার্ভার থেকে ৫০ হাজার তথ্য ভেরিফিকেশন করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, মাদারীপুর জেলায় মোট কার্ডের সংখ্যা ৫১ হাজার ৩৪৮ টি। এরমধ্যে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ১০৯ টি। বাকিগুলো অনলাইনে আপলোড হচ্ছে। ওই ৬ লক্ষের মধ্যেও কিছু থাকতে পারে। আমাদের হাতে আসলে দিয়ে দেব। এছাড়া রমজান মাস উপলক্ষে আগামী ৫ মার্চ থেকে শুধুমাত্র জেলা সদরে ট্রাকসেল কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সেখান থেকে টিসিবি কার্ড ছাড়াই জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে যেকেউ পণ্য নিতে পারবেন। পরবর্তীতে উপজেলা পর্যায়ে চালু হলে সকলকে জানিয়ে দেওয়া হবে।